হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. সাইয়্যেদ মাহদী আলীজাদে মুসাভী বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর জন্ম ও শাহাদাতের দিনগুলো তাঁর সত্য ও সীরাতকে নতুন করে পাঠ করার এক অমূল্য সুযোগ। ফাতিমীয় ঘটনা কেবল আবেগী বা অভ্যন্তরীণ-বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এর প্রকৃত গুরুত্ব অধরা থেকে যায়; বরং এটি এক গভীর সভ্যতামূলক মুহূর্ত, যা ইসলামের ইতিহাসকে যেন দুই অধ্যায়ে বিভক্ত করে— ফাতিমীয়ার পূর্ববর্তী যুগ এবং ফাতিমীয়ার পরবর্তী যুগ।
হুজ্জাতুল ইসলাম ড. আলীজাদে মুসাভী ব্যাখ্যা করেন যে, রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর সাকিফার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিচ্যুতির সূচনা হয়েছিল, তা ইসলামের মূল ধারা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিতে পারত। কিন্তু হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর অতুলনীয় সাহস, অবস্থান ও বক্তব্য সেই বিচ্যুতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইসলামকে তার বিশুদ্ধ পরিচয় ও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে।
হযরত ফাতিমা (সা.আ.): সত্য ও হাকিকত নির্ণয়ের মানদণ্ড
তিনি নবীজির (সা.) বিশুদ্ধ হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যখন মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন «فاطمة بضعة منی»—“ফাতিমা আমারই অস্তিত্বের অংশ”— এবং বলেন যে, “ফাতিমার সন্তুষ্টি মানে তাঁর (সা.) সন্তুষ্টি”, তখন স্পষ্ট হয় যে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর পথচলা ভুল হতে পারে না। তাই তাঁর জীবন, বক্তব্য ও অবস্থান সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের এক চিরন্তন মানদণ্ড।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাসে তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে নানা ধরনের বিকৃতির চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু ঠিক সেই কারণে আজকের গবেষণায় তাঁর জীবন ও ফাতিমীয় ঘটনা আরও নিখুঁতভাবে আলোচিত হচ্ছে এবং সত্য আরও উজ্জ্বলভাবে সামনে আসছে।
ইসলামী সভ্যতা রক্ষায় ফাতিমীয় ভূমিকা
হুজ্জাতুল ইসলাম ড. আলীজাদে মুসাভী বলেন, নবীজির (সা.) ইন্তেকালের পর ইসলামী সমাজ গভীর সঙ্কটের মুখে পড়ে। নেতৃত্ব, জ্ঞানভিত্তি ও চেতনার ক্ষেত্রে দ্রুত বিচ্যুতির ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ ইসলামী সভ্যতার কাঠামোই পাল্টে যেতে পারত।
কিন্তু হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর যুক্তিসম্মত বক্তব্য, প্রতিবাদ এবং অকুতোভয় অবস্থান ইসলামের সঠিক দিশা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর ফাতিমীয় অবস্থান ইসলামী সভ্যতার ভিত্তিকে স্থিতিশীল করে এবং বিচ্যুতির সম্ভাবনা থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর এই সভ্যতামূলক অবদান এখনো যথাযথভাবে গবেষিত হয়নি। বিশ্ব ইসলামে তাঁর ভূমিকার প্রকৃত গভীরতা বোঝার জন্য আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফাতিমীয় বার্তা
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. সাইয়্যেদ মাহদী আলীজাদেহ মুসাভী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বরাবরই ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র এবং আহলে বাইতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উর্বর ভূমি। বাংলাদেশেও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বিদ্যমান; তবে তাঁর জীবন ও সংগ্রামের সভ্যতামূলক দিক প্রচারের ক্ষেত্রে আরও কাজ করা প্রয়োজন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী, সচেতন নারীসমাজ ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিবেশ ফাতিমীয় বার্তা প্রচারে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এজন্য প্রতিনিধি দপ্তর বিভিন্ন ক্লাস, সেমিনার, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও গণমাধ্যম উদ্যোগে ফাতিমীয় চিন্তাধারা উপস্থাপন করছে।
মুসলিম নারীর সর্বাঙ্গীণ আদর্শ: হযরত ফাতিমা (সা.আ.)
তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশে লাখো নারী—বিশেষত উচ্চশিক্ষিত তরুণী ও সমাজে সক্রিয় নারীগোষ্ঠী—এক পূর্ণাঙ্গ আদর্শের খোঁজে রয়েছে; যে আদর্শে জ্ঞান, যুক্তিবোধ, আধ্যাত্মিকতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক দায়িত্ব সমন্বিতভাবে উপস্থিত। হযরত ফাতিমা (সা.আ.) সেই আদর্শ— এক পরিপূর্ণ ও জীবনদায়ী মডেল, যা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের ভবিষ্যৎ পথ আলোকিত করতে পারে।”
শেষে তিনি বলেন, “ইসলামী উম্মাহকে ভবিষ্যৎ নির্মাণে ফিরে যেতে হবে বিশুদ্ধ মানদণ্ডে। ফাতিমীয় যুক্তি, ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যনিষ্ঠতা যেখানে জীবিত থাকে, সেখানেই ইসলামী সভ্যতা বিকশিত হয়। আজ বিশ্ব ইসলাম, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া, এই সভ্যতামূলক সত্যকে গভীরভাবে পুনরাবিষ্কারের প্রয়োজন বোধ করছে।”
আপনার কমেন্ট